ফারহানা আহমেদ লিসা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
ইংল্যান্ড থেকে ১৬২০ সালে মে ফ্লাওয়ার জাহাজে চেপে ১০২ জন মানুষ স্বাধীন ধর্ম চর্চার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন অজানার উদ্দেশে। তারা আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস বেতে এসে যখন থামেন, বেশির ভাগ ক্লান্ত বা অসুস্থ। যারা সুস্হ ছিলেন তারা তীরে নেমে প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্ত নামের একজন আমেরিকান ইন্ডিয়ান তাদের কর্ন চাষ ও মাছ ধরাসহ নিত্য প্রয়োজনে বেঁচে থাকার উপায় শিখিয়ে দেন।
১৬২১ সালের নভেম্বরে তারা প্রথমবারের মতো নিজেদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলেন। তাদের উৎপাদিত ভুট্টার ফলন এত ভালো হয়েছিল যে পরবর্তী শীত পর্যন্ত তাদের কোনো খাদ্য ঘাটতি হয়নি। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড ও তাঁর দলের সদস্যরা ফসলের এমন প্রাচুর্যকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে মেনে নেন। তারা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিন দিনব্যাপী এক উৎসব উদ্যাপন করেন। উৎসবে ছিল ভূরিভোজের আয়োজন। বনময়ূর (টার্কি), ম্যাশটড পটেটো (আলু) ও কর্নসহ স্রষ্টাকে সুস্থতা, খাবার ও বন্ধুত্বের কৃতজ্ঞতা জানানোর অনুষ্ঠানের সেই শুরু। তখন উৎসবটিকে থ্যাংকস গিভিং ডে নামকরণ করা না হলেও সেটাই ছিল থ্যাংকস গিভিং ডে উদ্যাপনের ভিত্তি।
পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিংকন থ্যাংকস গিভিং ডেকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে এ দিন পালন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বড়দিনের পর সবচেয়ে বড় উৎসব থ্যাংকস গিভিং ডে। এই দিনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর থাকে অনেক পরিকল্পনা। সরকারি ছুটির দিনটিতে দেশজুড়ে থাকে নানা আয়োজন। তবে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে দিনটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংস্কৃতিরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে চমৎকারভাবে এ দিনটি পালন করা হয় জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে। জীবনের প্রতিটা সাফল্যের জন্য এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
আমি টার্কি খেয়ে অভ্যস্ত না বলে এ বনমোরগ আমাকে কখনোই খুব একটা মুগ্ধ করেনি। তবে ছুটির আমেজ, উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময় আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। শীত এখন প্রায় আসি আসি করছে।
থ্যাংকস গিভিং ডের আগে হাসপাতালে ভীষণ অসুস্থ একজন বৃদ্ধ রোগী পেলাম। যতকিছুই করা হোক কিছুতেই তিনি সুস্থ হচ্ছেন না।
তার স্ত্রী আমাকে প্রথম দেখাতেই বললেন, আমরা বিবাহিত ৭০ বছর ধরে। তুমি যেভাবে পার ওকে সুস্খ করে তোল।
ভদ্রমহিলা জানালেন, উনি পুরোটা টার্কি তেলে ভেজে ভীষণ মজার টার্কি ডিশ তৈরি করেন। বললেন, আমাদের এত বছরের থ্যাংকস গিভিংয়ের রেওয়াজ নষ্ট করা যাবে না।
আমি ভদ্রমহিলাকে রোগসংক্রান্ত আপডেট দিলাম। বিকেলে রোগীকে দেখতে আবার গেলাম। তারপর ভদ্রমহিলার সঙ্গে বসলাম। বললাম, রোগী ভালো নেই, আমাদের হাত–পা বাঁধা।
ভদ্রমহিলা মনে হয় না আর কখনোই টার্কি বানাতে পারবেন। তিনি অনেক রাগ করলেন। বললেন, আমি কোনো কথা শুনব না। ভালো কিছু থাকলে বল।
শীতের রাত। কোথাও কোথাও ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা শুরু হয়েছে। গেট দিয়ে আমার কমিউনিটিতে ঢুকে দেখি গাছের গোড়ায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলোরসজ্জা। এত সুন্দরের মাঝেও মনটা ভীষণ খারাপ হয়েই থাকল।
পরদিন রোগীকে দেখতে গেলাম। সময়টা থ্যাংকস গিভিংংয়ের দুই দিন আগে। রোগীর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
আমি ভদ্রমহিলাকে বললাম, ম্যাম তোমার সব আত্মীয়স্বজনকে খবর দাও। আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই।
বিকেল নাগাদ দেখি হাসপাতালে রোগীর রুম তাদের ভালোবাসার ৭০ বছরের নানা স্মৃতির ভালোবাসাময় ছবি দিয়ে সাজানো। ভদ্রমহিলা তার নাতনিকে আমার সঙ্গে পরিচয় করে দিতে নিয়ে এসেছেন।
আমি একটু শঙ্কিত। রোগীর অবস্থা ভালো না। দেখি ঝকঝকে চোখের নীলনয়না আমাকে বলছেন, তোমার মতো এরকম ডাক্তার আমাদের অনেক দরকার। চলে যাবার আগে বিদায় জানানোর সময়টুকু আমার জন্য খুব জরুরি ছিল। সত্যি কথা বলার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
পরদিন সকালে রোগীর প্রায় ১৫/১৬ জন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিটিং করলাম। তারা রোগীর জীবনের শেষ সময়টুকু তাকে কষ্ট কমিয়ে কমফোর্ট কেয়ারে দিতে চান। ব্যথানাশকসহ সব ওষুধ অর্ডার দিলাম। অপ্রয়োজনীয় যত আয়োজন বন্ধ হলো। রোগী থ্যাংকস গিভিংয়ের দিনই মারা যান।
থ্যাংকস গিভিংয়ের দিন পুত্র–কন্যাসহ ছোট্ট আয়োজনে ভীষণ ভালো আনন্দময় একটা ডিনার করেছি আমরা বাংলাদেশি রীতিতে। আমি স্বাস্খ্য, সন্তান আর জীবনের সব প্রাপ্তির জন্য আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম। ৭০ বছরের ভালোবাসার সমাপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকা একজন অজানা ভদ্রমহিলার জন্যও অনেক দোয়া করলাম। দোয়া করলাম আমার প্রাণের দেশের জন্য। দেশটা শত্রু মুক্ত থাকুক, সমৃদ্ধি নিয়ে ভালো থাকুক।
—ফারহানা আহমেদ লিসা, চিকিৎসক
সান ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
ইংল্যান্ড থেকে ১৬২০ সালে মে ফ্লাওয়ার জাহাজে চেপে ১০২ জন মানুষ স্বাধীন ধর্ম চর্চার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন অজানার উদ্দেশে। তারা আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস বেতে এসে যখন থামেন, বেশির ভাগ ক্লান্ত বা অসুস্থ। যারা সুস্হ ছিলেন তারা তীরে নেমে প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্ত নামের একজন আমেরিকান ইন্ডিয়ান তাদের কর্ন চাষ ও মাছ ধরাসহ নিত্য প্রয়োজনে বেঁচে থাকার উপায় শিখিয়ে দেন।
১৬২১ সালের নভেম্বরে তারা প্রথমবারের মতো নিজেদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলেন। তাদের উৎপাদিত ভুট্টার ফলন এত ভালো হয়েছিল যে পরবর্তী শীত পর্যন্ত তাদের কোনো খাদ্য ঘাটতি হয়নি। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড ও তাঁর দলের সদস্যরা ফসলের এমন প্রাচুর্যকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে মেনে নেন। তারা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তিন দিনব্যাপী এক উৎসব উদ্যাপন করেন। উৎসবে ছিল ভূরিভোজের আয়োজন। বনময়ূর (টার্কি), ম্যাশটড পটেটো (আলু) ও কর্নসহ স্রষ্টাকে সুস্থতা, খাবার ও বন্ধুত্বের কৃতজ্ঞতা জানানোর অনুষ্ঠানের সেই শুরু। তখন উৎসবটিকে থ্যাংকস গিভিং ডে নামকরণ করা না হলেও সেটাই ছিল থ্যাংকস গিভিং ডে উদ্যাপনের ভিত্তি।
পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট লিংকন থ্যাংকস গিভিং ডেকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে এ দিন পালন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বড়দিনের পর সবচেয়ে বড় উৎসব থ্যাংকস গিভিং ডে। এই দিনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর থাকে অনেক পরিকল্পনা। সরকারি ছুটির দিনটিতে দেশজুড়ে থাকে নানা আয়োজন। তবে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে দিনটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংস্কৃতিরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে চমৎকারভাবে এ দিনটি পালন করা হয় জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে। জীবনের প্রতিটা সাফল্যের জন্য এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
আমি টার্কি খেয়ে অভ্যস্ত না বলে এ বনমোরগ আমাকে কখনোই খুব একটা মুগ্ধ করেনি। তবে ছুটির আমেজ, উৎসবমুখর পরিবেশ সব সময় আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। শীত এখন প্রায় আসি আসি করছে।
থ্যাংকস গিভিং ডের আগে হাসপাতালে ভীষণ অসুস্থ একজন বৃদ্ধ রোগী পেলাম। যতকিছুই করা হোক কিছুতেই তিনি সুস্থ হচ্ছেন না।
তার স্ত্রী আমাকে প্রথম দেখাতেই বললেন, আমরা বিবাহিত ৭০ বছর ধরে। তুমি যেভাবে পার ওকে সুস্খ করে তোল।
ভদ্রমহিলা জানালেন, উনি পুরোটা টার্কি তেলে ভেজে ভীষণ মজার টার্কি ডিশ তৈরি করেন। বললেন, আমাদের এত বছরের থ্যাংকস গিভিংয়ের রেওয়াজ নষ্ট করা যাবে না।
আমি ভদ্রমহিলাকে রোগসংক্রান্ত আপডেট দিলাম। বিকেলে রোগীকে দেখতে আবার গেলাম। তারপর ভদ্রমহিলার সঙ্গে বসলাম। বললাম, রোগী ভালো নেই, আমাদের হাত–পা বাঁধা।
ভদ্রমহিলা মনে হয় না আর কখনোই টার্কি বানাতে পারবেন। তিনি অনেক রাগ করলেন। বললেন, আমি কোনো কথা শুনব না। ভালো কিছু থাকলে বল।
শীতের রাত। কোথাও কোথাও ক্রিসমাসের আলোকসজ্জা শুরু হয়েছে। গেট দিয়ে আমার কমিউনিটিতে ঢুকে দেখি গাছের গোড়ায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলোরসজ্জা। এত সুন্দরের মাঝেও মনটা ভীষণ খারাপ হয়েই থাকল।
পরদিন রোগীকে দেখতে গেলাম। সময়টা থ্যাংকস গিভিংংয়ের দুই দিন আগে। রোগীর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
আমি ভদ্রমহিলাকে বললাম, ম্যাম তোমার সব আত্মীয়স্বজনকে খবর দাও। আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই।
বিকেল নাগাদ দেখি হাসপাতালে রোগীর রুম তাদের ভালোবাসার ৭০ বছরের নানা স্মৃতির ভালোবাসাময় ছবি দিয়ে সাজানো। ভদ্রমহিলা তার নাতনিকে আমার সঙ্গে পরিচয় করে দিতে নিয়ে এসেছেন।
আমি একটু শঙ্কিত। রোগীর অবস্থা ভালো না। দেখি ঝকঝকে চোখের নীলনয়না আমাকে বলছেন, তোমার মতো এরকম ডাক্তার আমাদের অনেক দরকার। চলে যাবার আগে বিদায় জানানোর সময়টুকু আমার জন্য খুব জরুরি ছিল। সত্যি কথা বলার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
পরদিন সকালে রোগীর প্রায় ১৫/১৬ জন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিটিং করলাম। তারা রোগীর জীবনের শেষ সময়টুকু তাকে কষ্ট কমিয়ে কমফোর্ট কেয়ারে দিতে চান। ব্যথানাশকসহ সব ওষুধ অর্ডার দিলাম। অপ্রয়োজনীয় যত আয়োজন বন্ধ হলো। রোগী থ্যাংকস গিভিংয়ের দিনই মারা যান।
থ্যাংকস গিভিংয়ের দিন পুত্র–কন্যাসহ ছোট্ট আয়োজনে ভীষণ ভালো আনন্দময় একটা ডিনার করেছি আমরা বাংলাদেশি রীতিতে। আমি স্বাস্খ্য, সন্তান আর জীবনের সব প্রাপ্তির জন্য আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ জানালাম। ৭০ বছরের ভালোবাসার সমাপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকা একজন অজানা ভদ্রমহিলার জন্যও অনেক দোয়া করলাম। দোয়া করলাম আমার প্রাণের দেশের জন্য। দেশটা শত্রু মুক্ত থাকুক, সমৃদ্ধি নিয়ে ভালো থাকুক।
—ফারহানা আহমেদ লিসা, চিকিৎসক
সান ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
কুয়েতের একটি তদন্ত কমিটি ২ হাজার ৮৯৯ কুয়েতির নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। এ সিদ্ধান্তটি এখন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের কাছে পাঠানো হবে।
কুয়েতে ১০ হাজার নার্স নিয়োগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন।
সৌদি রেড ক্রিসেন্টের মদিনা শাখার পরিচালক ডা. আহমেদ বিন আলী আল জাহরানির ও মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতান বিন আব্দুলাজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সার্ভিসটির উদ্বোধন করেন।