top ad image
top ad image
home iconarrow iconরাজনীতি

এমপি আজীম হত্যার পরিকল্পনা ২ মাস আগে ঢাকায়

এমপি আজীম হত্যার পরিকল্পনা ২ মাস আগে ঢাকায়
ফাইল ছবি

ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা ঢাকায় বসে করা হয়েছিল। দুই মাস আগে রাজধানীর গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসে এ পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

হারুন অর রশিদ জানান, আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ নিশ্চিহ্ন করতে আলাদা করা হয় হাড়-মাংস। সন্দেহ এড়াতে হলুদ মিশিয়ে ফেলা হয় বিভিন্ন জায়গায়।

কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীমের হত্যার খবর সামনে আসার পর থেকে ধোঁয়াশা তৈরি হয় মরদেহ নিয়ে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মরদেহ টুকরো করে দুটি ব্রিফকেসে করে ফ্ল্যাট থেকে সরিয়ে ফেলে হত্যাকারীরা। এর আগে বলা হয়েছিল, তাঁর মরদেহ টুকরো টুকরো করে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, শুরুতে বাংলাদেশেই হত্যার পরিকল্পনা করা হলেও পরে তা ভারতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে হত্যাকারী আমানউল্লাহসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মরদেহ বিভিন্ন পার্টে ভাগ করে ফেলেছে। অর্থাৎ, হাড্ডি আর মাংস আলাদা করে ফেলেছে। সেটা একটা গ্রে কালারের সুটকেসে করে মূল যে, আমাদের কাছে যিনি আছেন, উনি আর হলো জাহিদ বা জিহাদ—এরা দুজন সুটকেসে করে পাবলিক টয়লেটের কাছে একটা গাড়ি অপেক্ষা করছিল সেখানে নিয়ে যায়।’

ডিবির দাবি, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী আমান উল্লাহ। সাথে ছিলেন শাহীনের বান্ধবী সেলেস্তা রহমান। আমান উল্লাহ-সেলেস্তাসহ তানভীর নামের আরও একজন গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে।

হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ আর্থিক নাকি আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব—তা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ডিবি। সংস্থাটির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যারা ঘটিয়েছে তাদের সবকিছু, নাম–নম্বর আমরা পেয়েছি, তাদেরকেও গ্রেপ্তার করব। পাশাপাশি সেখানে আর্থিক বা রাজনৈতিক কারণে অথবা কোনো আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে কোনো ধরনের কারণে এটি হয়েছে কিনা, সেটাও আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসবে।’

এদিকে বাংলাদেশের পুলিশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আসামি গ্রেপ্তার ও হত্যার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে ভারতে তদন্ত দল যাবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঘটনা হয়েছে ভারতে। আমাদের এখানকার মানুষও এখানে জড়িত আছে। ভারতের কেউ জড়িত থাকলে তাদের গোয়েন্দারা আমাদের জানাবে। তারাও এটা নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছে।’

আনোয়ারুল আজীমের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান তিনি। ১৩ মে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে জানান, দিল্লি যাচ্ছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। কলকাতা পুলিশ বুধবার জানায়, আজিম খুন হয়েছেন। একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, সংসদ সদস্য আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আনোয়ারুল আজীম ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এ ঘটনার পর বুধবার সংসদ সদস্য আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গত ১৩ মে বাবার ইন্ডিয়ান সিম নম্বর +৯১৭০৬৩২১৪৫৬৯ থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি ম্যাসেজ আসে, “আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।” এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’

ডিবি বলছে, গত ১৩ মে আধঘণ্টায় কিলিং মিশন শেষ করে হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় ঢাকায় দায়ের করা অপহরণ মামলায় ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

r1 ad
r1 ad